সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোজার বৈজ্ঞানিক উপকার



রোজার ধর্মীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করার পরও শরীর খারাপ করবে বা রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য নেই। এই অজুহাতে অনেকে রোজা রাখেন না।  কিন্তু রোজার ফজিলতের বিষয়ে কোরআন-হাদিসে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। শারীরিক উপকারিতা বিষয়ে ব্যাখ্যা রয়েছে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকদের। এখানে কয়েকটি বিশ্লেষণ করা হলো।  

১. আপনি সহজে বুড়ো হবেন না : আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এজিংয়ের নিউরো সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মার্ক পি ম্যাটসন ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, নিয়মিত ডায়েটিং করলে একজন মানুষের দেহে যে প্রভাবগুলো পড়ে,  রোজা বা উপবাসও সেই একই প্রভাব ফেলে। ইঁদুরের ওপর এবং পরে মানুষের ওপর ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা একদিন পরপর উপবাসের প্রভাব নিয়ে গবেষণাটি তারা পরিচালনা করেন। তারা বলেন, উপবাসের ফলে দেহে এমন কিছু প্রোটিন উৎসারিত হয় যেটা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে অক্সিডেশনজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং স্নায়ুকোষের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে বয়সজনিত রোগ যেমন, অ্যালঝেইমার, হান্টিংটন বা পার্কিনসন্সের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। গবেষণায় তারা দেখেন, কয়েক ঘণ্টা পরপর নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ রক্তে শর্করার মান সবসময় উঁচু রাখে। শক্তি উৎপাদনের জন্য এই শর্করাকে বিপাক হতে হয়। এই বিপাকের একটি উপজাত হলো জারণ। এই জারণের ফলে দেহে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল অক্সিজেন অণু, যার সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলো বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করা। কিন্তু রোজা বা উপবাস এ প্রক্রিয়াকেই পাল্টে দেয়। অনাহারের ফলে দেহে যে সাময়িক শক্তি সংকট হয় তা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রোটিন উৎপাদনে উৎসাহ দেয়, এমনকি নতুন ব্রেন সেলও জন্মায়।

২. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে : রোজা রাখলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। ম্যাটসনের ব্যাখ্যায় বলেন, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া মানে দেহকোষগুলোতে ইনসুলিনের স্থিতিশীল সরবরাহ। এই তৃপ্ত এবং অলস কোষগুলো তখন হয়ে যায় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্ট। আর ডায়াবেটিসের লক্ষণ এটাই। কিন্তু মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়া বাদ দিলে এ কোষগুলো আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং বিপাক করতে পারে দক্ষভাবে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ এবং হার্ট-এটাকের আশংকাও কমে।

৩. ওজন কমাতে পারবেন সহজে : ওজন কমাতে চাইলেও রোজা বা উপবাস আপনার জন্যে খুব কার্যকরী। ড. এরিক রভুসিনের গবেষণা থেকে দেখা গেছে ওজন কমাতে গিয়ে প্রতিদিন কঠোরভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণের চেয়ে একদিন স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া এবং তার পরদিন কিছুই না খাওয়া –এরকম ‘সবিরাম উপবাস’ অনেক ভালো ফল দিতে পারে। তিনি বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকার চেয়ে সবিরাম উপবাস একটি ভালো বিকল্প।

৪. স্ট্রেস কমায় : যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস এর গবেষণায় দেখা গেছে উপবাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, সুস্থতার অনুভূতিকে বাড়ায় এবং দীর্ঘজীবন এনে দেয়।

৫. কোলেস্টেরল কমায় : সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকজন কার্ডিওলজিস্ট একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর একটি গবেষণা চালান। ৩০ দিন রোজা রাখার পর দেখা গেল দেহের ওজন বা সুস্থতাবোধের ওপর কোনো প্রভাব না পড়লেও তাদের রক্তের লিপিড প্রোফাইলের ওপর চমৎকার প্রভাব পড়েছে। অর্থাৎ তাদের রক্তে এলডিএল বা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমেছে। শুধু মুসলমানরাই নন, অর্থডক্স খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় উপবাসকালীন সময়ে একই প্রভাব দেখা গেছে তাদের দেহে।

৬. রক্তচাপ কমায় : গবেষণায় আরো দেখা গেছে রোজা বা উপবাস ব্যায়ামের চেয়েও কার্যকরভাবে হার্টবিট ও ব্লাড প্রেশার কমাতে পারে।

৭. ক্যান্সার ঝুঁকি কমায় : ক্যান্সারের ক্ষেত্রে উপবাসের কোনো প্রভাব আছে কি না তা নিয়ে মানুষের ওপর এখনো কোনো গবেষণা না হলেও প্রাণিদের ওপর এরইমধ্যে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে উপবাসের ফলে তাদের লিম্ফোমার ঝুঁকি কমেছে, টিউমার অপসারণ পরবর্তী বেঁচে থাকার হার বেড়েছে এবং ক্যান্সারাস কিছু কিছু সেলের ফের বৃদ্ধিকে ঠেকায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডাইনির খপ্পরে মুছির ছেলে ? মাওলানা ইব্রাহীম আজিজি

এক দেশে এক রাজা ছিলো, তার একটি কন্যা ছিলো। তার বিবাহের বয়স অনেক কিন্তু রাজকন্যার বিবাহ সে কারো সাথে দিতে চাইতোনা।কারন সে ভাবতো তার সমান কোনো রাজা নেই, এই পাগলামির কারনো সে বড় বড় অনেক রাজার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতো। হঠাৎ সে দেশে একদিন প্রচন্ড ঝড় তুফান শুরু হলো বাতাসের গতি এত তীব্র ছিলো যে রাজার সুরক্ষিত ঘরের চাদে এক নেংটি পরা মুচির ছেলেকে তুলে রেখে দিলো। ঝড় থামার পর সেই ছেলেকে দেখে সবাই অবাক!!!! এত সংরক্ষিত সিঁড়ি বিহীন চাঁদে তো কোন সাধারণ মানুষ সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়, রাজা সকল পন্ডিতদের ডেকে তার রহস্য উদ্ঘাটন করার আদেশ জারি করলেন। পন্ডিতরা অনেক চিন্তা গবেষণা করে উত্তর দিলো যে এটা এক গায়েবি মানুষ। রাজকন্যার সাথে বিবাহের জন্য তাকে আসমান থেকে পাঠানো হয়েছে। যখন দৃশমান এ জগতে কোনো যোগ্য পাত্র পাওয়া যায়নি তাই তাকে গায়েবি জগৎ থেকে পাঠানো হয়েছে। এই ঘোষণা রাজার পছন্দ হয়েছে, তখন রাজা হুকুম দিলেন তাকে গরম পানিতে চন্দনের পানি দিয়ে গোসল করাও, যখন গোসল করানোর জন্য সবাই ধরলো তখন সে চিৎকার দিতে লাগলো। রাজা পন্ডিতদের জিজ্ঞেস করলো চিৎকার করতেছে কেন, তাঁরা বললো সে আলমে গায়বের মানুষ এখনো আমাদের এ জগতের স

রাতে যত তাড়াতাড়ি ঘুমাবেন ততই উপকার।- মাওলানা ইব্রাহীম আজিজি

বর্তামানে বিশেষ করে তরুণ তরুণী যুবক যুবতীরা যে সমস্ত সমস্যায় জর্জরিত এবং রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য সু-পরামর্শ। বর্তমানে চিকিৎসকগণ দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অনেক উপকারিতা বর্ণনা করেছেন ----------- (এক) রোগ প্রতিরোধ : তাড়াতাড়ি ঘুমানো হলে মানুষের বুড়িয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথাসহ কয়েকটি মানসিক রোগ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আর এ অভ্যাস গড়ে তুললে পেটও ভালো থাকবে। ফলে শরীরের রোগব্যাধি প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে। (দুই)ওজন নিয়ন্ত্রণ : পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তাই পর্যাপ্ত ঘুমালে মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। (তিন) উদ্যম : তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া মানুষকে কাজে উদ্যমী ও সৃষ্টিশীল হতে সহায়তা করে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের পর দিনের কার্যক্রম চালানোর জন্য যখন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা যাবে, তখন তত বেশি প্রাণবন্ত ও উদ্যম বোধ হবে। এতে দিনে সহজে ক্লান্তিবোধ হবে না। এ উদ্যম পরিপূর্ণভাবে কাজ করার জন্য যথাসম্ভব মাঝরাতের আগে ঘুমাতে যেতে হবে। (চার) মনের প্রফুল্লতা : যারা তাড়াতা

হে কাওমীর মেধাবী সূর্য সন্তানরা (৩) ইব্রাহীম আজিজি

হে কাওমীর মেধাবী সূর্য সন্তানারা! তোমরা যেভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব, তাবলীগ, পীর, মুরিদি,রাজপথ সহ ইত্যাদি জায়গা গুলোতে তোমাদের অবদান অনস্বীকার্য, ঠিক তেমনি বর্তমান ইন্টারনেট জগতে চাই তোমাদের অগ্রনি ভুমিকা, কিন্তু অন্য সাধারন আট দশজনের মত নেট জগতে ডুকে নিজের অস্তিত্ব বিলিয়ে দিলে চলবে না, নিজের শান মান ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র কয়েকটি নিজের বা বন্ধু বান্ধবের ছবি পোস্ট করলে চলবেনা, নিজের হাসি তামাশা বা অযথা সময় পার করার জন্য তুমি fb ব্যবহার করবেনা, সাথে সাথে বেহায়াপনা, নোংরামি গান নাচ ইত্যাদি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করার থেকে বেচে থাকাটাই তোমার ঈমানি পরীক্ষা। তাছাড়া যখনই তুমি fb তে ডুকবে তখনই দেখবে একটা দল তোমার ইতিহাস তোমার ঐতিহ্য নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতেছ, তোমার প্রানপ্রিয় উস্তাদদের নিয়ে বেঙ বিদ্রুপে মগ্ন, তোমার সেরে তাজ যাদের তুমি আকাবের মনে করো, যাদের তুমি তোমার চলার পথের পাথেয় মনে করো, যাদের জীবন কাহীনি অধ্যায়ন করে তুমি রাতকে রাত অতিবাহিত করো,যাদের জিবন থেকে তোমার সামনের পথ চলার দীক্ষা নিয়েছো, যাদের ইলেম থেকে নিজের ইলেমের প্রান সঞ্চার করেছো,যাদের ইলেম থেকে পুরো জাতিই উপকৃত হয়েছে, আজ কিছ